ঢাকা , রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫ , ২১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
ক্যালিফোর্নিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে ভয়াবহ দাবানল গাজায় ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৬১৩: জাতিসংঘ প্রাচীরে ধাক্কা খেয়ে উল্টে গেল গাড়ি, বরসহ নিহত ৮ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঋণ পৌঁছেছে ৩৭ ট্রিলিয়ন ডলারে টেক্সাসে হঠাৎ বন্যায় ২৪ জনের মৃত্যু, নিখোঁজ ২৫ শিশু পাকিস্তানে অফিস বন্ধ করল মাইক্রোসফট, কর্মী ছাঁটাই ভুলবশত নিজেদের ছোড়া গুলিতে ৩১ ইসরায়েলি সেনা নিহত: রিপোর্ট চুক্তি নবায়ন করতে আলোচনার টেবিলে মেসি ক্লাব বিশ্বকাপের শেষ চারে পৌঁছে গেলো চেলসি ক্লাব বিশ্বকাপের সেমির টিকেট পেলো ব্রাজিলের ফ্লুমিনেন্স ধ্বংসস্তূপ থেকে ইংল্যান্ডকে টেনে তুললেন ব্রুক-স্মিথ লিড পেয়েও অস্বস্তিতে অস্ট্রেলিয়া পিছিয়ে গেলো ভারত সিরিজ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দল ঘোষণা দারিদ্র্য, প্রতারণা আর দালাল চক্রের ভয়াবহ বাস্তবতা বরগুনায় ডেঙ্গুর প্রকোপ হাসপাতালে ভর্তি ৮৬ প্রতিদিন সড়কে ঝরছে ১৫ প্রাণ গোলাম মাওলা রনি টেলিভিশন টকশোতে অসত্য তথ্য ছড়াচ্ছেন-প্রেসসচিব আরও ৮ জনের করোনা শনাক্ত দেশের এই পরিস্থিতিতে কিসের নির্বাচন-জামায়াত আমির
* ঢাকায় গুলশান লেকের অস্তিত্বই বিলীন হওয়ার আশঙ্কা * প্রমত্তা নড়াই নদী এখন শুধুই ময়লার ভাগাড় * হাতিরঝিল এখন ময়লার ভাগাড়, দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী * ময়লার ভাগাড়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন যাত্রাবাড়ী-ডেমরার বাসিন্দারা * কেরানীগঞ্জে সড়কের দু’পাশে ময়লার ভাগাড়, দুর্ভোগে স্থানীয়রা

যত্রতত্র ময়লার ভাগাড়

  • আপলোড সময় : ০৫-০৭-২০২৫ ০৭:০৪:০৫ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৫-০৭-২০২৫ ০৭:০৪:০৫ অপরাহ্ন
যত্রতত্র ময়লার ভাগাড়
রাজধানীজুড়ে ময়লা-আবর্জনা পরিণত হয়েছে ‘যত্রতত্র’ ময়লায় ভাগাড়ে। জনসচেতনতার অভাব আর দায়িত্ববানদের অবহেলা ও কর্তৃপক্ষের চরম অব্যবস্থাপনায় গোটা রাজধানীই যেন ময়লা-আবর্জনার বৃহৎ ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। রাস্তাঘাট, অলিগলি, আবাসিক, বাণিজ্যিক এলাকা-সর্বত্রই ময়লা-আবর্জনার ছড়াছড়ি। নর্দমার নোংরা ময়লা-পানি ঢুকে পড়ছে বাড়িঘরেও। চারদিকের উৎকট গন্ধে বাতাস ভারী হয়ে থাকছে। প্রতিটি বাড়ির ফাঁকে, খোলা জায়গায়, গলিপথে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। যে কারণে নগরবাসীকে এখন চলাফেরা করতে হয় নাক টিপে। নানা ধরনের ময়লা-আবর্জনার উৎকট গন্ধ নাগরিক জীবনকে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেললেও এর বিন্দুমাত্রও টের পান না নগর কর্তারা। বর্তমানে নগরজুড়ে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ বর্জ্য উৎপন্ন হয়, যার সঠিক ব্যবস্থাপনা না থাকার কারণে যত্রতত্র ময়লার স্তূপ দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে, সড়ক, খাল এবং বিভিন্ন উন্মুক্ত স্থান ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এর ফলে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে এবং জনস্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
ঢাবি অপরিচ্ছন্নতাই চিরাচরিত চিত্র: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) মৌলিক পরিচ্ছন্নতা যথাযথভাবে রক্ষা সম্ভব হচ্ছে না। গত কয়েকদিনে ক্যাম্পাসসহ আশপাশের এলাকা সরেজমিনে ঘুরে অপরিচ্ছন্নতা ও বেশিরভাগ অ্যাকাডেমিক এবং আবাসিক ভবনের শৌচাগারগুলো খুবই অপরিষ্কার এবং অস্বাস্থ্যকর চিত্র নজরে এসেছে। তবে বেশ কয়েকটি ভবন বেশ পরিচ্ছন্নও দেখা গেছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের দফতর প্রশাসন ৯-এর তথ্যমতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী এবং খণ্ডকালীন পরিচ্ছন্নতাকর্মী ৩৫০ জনের কাছাকাছি। কেন্দ্রীয়ভাবে এস্টেট অফিস এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের হল, বিভাগের অধীনে এরা নিয়োগপ্রাপ্ত। সবারই ন্যূনতম আটঘণ্টা ডিউটি করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচ্ছন্নতার সুনির্দিষ্ট কোনো মাপকাঠি বা নির্দেশনা নেই। ফলে কোনো হলে প্রত্যহ দুইবার আবার কোথাও সপ্তাহে মাত্র দুইবার পরিচ্ছন্নতার কাজ করা হয়। আবার কোনো এরিয়াকে পরিষ্কার করবে-এ বিষয় সুনির্দিষ্ট করা নেই। ফলে কয়েক অফিসে কর্মীদের রেষারেষিতে কিছু স্থান পরিষ্কার করাই হয় না। নির্ধারিত পোশাকও কেউ পরিধান করে না। গত ২০২৩ সালের নভেম্বরে শীর্ষ প্রশাসন সব অফিসে চিঠি দিয়ে জানায়, ক্যাম্পাসে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কাজে শৈথিল্য দেখা যাচ্ছে, তারা সঠিক সময়ে ডিউটি না করায় রাস্তার ধুলাবালিতে চলাচলে সবার অসুবিধা হচ্ছে। এতে কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়। তবে সেগুলো মানতে দেখা যায়নি। মোকাররম ভবন ও বিজ্ঞান লাইব্রেরি এলাকা যত্রযত্র ময়লার ভাগাড় হয়ে আছে, দেখে বুঝা যায়, দীর্ঘদিন পরিষ্কার করা হয় না। এখানে মোকাররম হোসেন খন্দকার বিজ্ঞান ভবনে ফার্মেসি অনুষদ ও বিজ্ঞান অনুষদের বিভাগ, বিজ্ঞান লাইব্রেরি, পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউট, তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটসহ বেশকিছু ভবন রয়েছে। প্রত্যেক বিভাগের বা ইনস্টিটিউটের নিজস্ব পরিচ্ছন্নতাকর্মী রয়েছে। কে কোন অংশ করবে, এটা নিয়ে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা একে অন্যের ওপর দায় চাপিয়েছেন। এখানে ময়লা স্থানান্তরের কোনো ব্যবস্থাও নেই। কেন্দ্রীয় মসজিদের পশ্চিমপাশে বিশাল আবর্জনার ভাগাড়, কলাভবন ক্যাফের পেছনে মধুর ক্যান্টিনের সামনে ময়লা/বালুর স্তূপ এবং পরিত্যক্ত ভ্যান পড়ে আছে। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সামনের রাস্তাও পরিষ্কার নয়, খানাখন্দে ভরা। বৃষ্টি হলেই এখানে কাদা জমে। শাহবাগের দিক থেকে টিএসসি যাওয়ার সড়ক সংলগ্ন নাটমণ্ডলের পুরো বাগান ময়লায় ঘেরা। চারুকলার অভ্যন্তরও বেশ অপরিচ্ছন্ন। আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের পিছনে দীর্ঘদিন পরিষ্কার না করায় আবর্জনা স্তূপ হয়ে আছে। এগুলোতেও দীর্ঘদিন কারও নজর নেই। একই অবস্থা দেশের সবচেয়ে বড় হাসপাতাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের। কিন্তু দেখে তো মনে হয় না। দেখে মনে হচ্ছে হাসপাতাল তো নয় যেন ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ের মধ্যে বসবাস করছি। চারপাশের পরিবেশ এতটাই নোংরা ও অপরিচ্ছন্ন  যে টিকে থাকায় দায়। আর আবর্জনার দুর্গন্ধে পেটের নাড়িভুঁড়ি উল্টে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়। আর টয়লেটের কথা কি বলবো গেলেই বমি চলে আসে। নাক-মুখ চেপে ধরেও যাওয়া যায় না। এই অবস্থায় একজন সুস্থ মানুষও অসুস্থ হয়ে পড়বে। এই কথা বলছিলেন হালিমা আক্তার। তিনি তার মাকে নিয়ে হাসপাতালের  দ্বিতীয় তলার নিউরো সার্জারির (মহিলা পেইং) ২০০ নং ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন। একই অভিযোগ তার আশপাশে থাকা এবং পুরুষ ওয়ার্ডে ভর্তিসহ অসংখ্য রোগী স্বজনদের। তবে সরেজমিনে হাসপাতালের পুরাতন ভবনের দ্বিতীয় তলায় নিউরো সার্জারির পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, শত রোগী ও স্বজনদের উপচে পড়া ভিড়। নির্ধারিত শয্যার বাইরেও সামনের মেঝে, করিডোর এবং ঢাল সিঁড়িতে পাটি বিছিয়ে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা। স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে  যত্রতত্র পড়ে আছে পচা রক্তের ব্যাগ, রক্তমাখা ব্যান্ডেজ, নোংরা ও আবর্জনা কাগজ, বোতল এবং ড্রেসিং ও  অপারেশনে ব্যবহৃত গজ তুলাসহ অন্যান্য বর্জ্য। এখানকার টয়লেটের অবস্থা আরও ভয়াবহ। নিধারিত ডাস্টবিনে উপচে পড়ে আছে পচাবাসি খাবারের প্যাকেট,  পলিথিন, তুলা, টিস্যুসহ সব প্রকারের উচ্ছিষ্ট এবং  মেডিকেল বর্জ্য। টয়লেটের পানি এসে গড়িয়ে পড়ছে বাইরে বারান্দা থেকে মেঝেতে শুয়ে থাকা রোগীর ওপর। শুধু এই দৃশ্য সার্জারি বিভাগে নয় পুরাতন ভবনের প্রতিটি ওয়ার্ড এবং টয়লেট জুড়েই একই অবস্থা দেখা গেছে। এমন অবস্থায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে দেখা গেছে চিকিৎসা নিতে রোগী ও স্বজন, চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীদের। তবে অনেকেই  ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রোগী ও দর্শনার্থীরা দুর্গন্ধে নাকাল হয়ে উঠলেও নীরব ভূমিকায় রয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে কথা বলতেও রাজি নয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
গুলশান লেকের অস্তিত্বই বিলীন হওয়ার আশঙ্কা: ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অন্তর্গত গুলশান লেক এখন এক ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। সুউচ্চ ভবনের ছায়ায় ঢাকা এই জলাশয় পচা পানি ও দুর্গন্ধে ভরা, যা এলাকাবাসী এবং অফিসগামীদের জীবনযাত্রাকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। লোকালয়ে অভিযোগ, বারবার সিটি করপোরেশনে বিষয়টি তুলে ধরার পরও কোনো কার্যকর প্রতিকার মিলছে না। শহর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে খাল পরিষ্কার কার্যক্রমের জন্য মোট ৩৫ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও গুলশান লেকের জন্য বিশেষ কোনো বাজেট রাখা হয়নি। এ বিষয়ে কথা হয় গুলশান সোসাইটির সহসভাপতি ইসরাত জাহান এর সঙ্গে। তিনি  জানান, বিভিন্ন ভবনের সুয়ারেজ সরাসরি লেকে চলে যাচ্ছে, যা পানিকে দূষিত করছে। তিনি উল্লেখ করেন, রাজউক, সিটি করপোরেশন ও ওয়াসার সমন্বয়ে কাজ করলে সমস্যার সমাধান সম্ভব। তবে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক ড. মুহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, সিটি করপোরেশনকে নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালাতে হবে এবং লেক দূষণমুক্ত রাখতে নজরদারি বাড়াতে হবে। তার কথায়, এ ক্ষেত্রে রাজউকেরও ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ জানান, সকাল ৮টার মধ্যে সারা এলাকা পরিষ্কার করা হলেও দুপুরের মধ্যেই আবার ময়লা জমে যায়। তিনি বলেন, ‘আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে নাগরিকদের সচেতনতা জরুরি। তবে গুলশান লেক এখন মশার প্রকোপ বৃদ্ধি ও মাছের অবমুক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নাগরিকরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, এই অবস্থা চলতে থাকলে শিগগিরই লেকটির অস্তিত্বই বিলীন হয়ে যাবে। ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এই লেক-যেখানে দূষণ আর অবহেলা মিলিয়ে শহরের বাসযোগ্যতার প্রশ্নকে ঘিরে উঠছে শঙ্কা। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই শহর কি সত্যিই বাসযোগ্য থাকবে, নাকি ঢাকাবাসীকে অভ্যস্ত হতে হবে জীবনের এই বিষাক্ত বাস্তবতায়।
হাতিরঝিল এখন ময়লার ভাগাড়: ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে রাজধানীর হাতিরঝিল প্রকল্প। নষ্ট হচ্ছে এ পরিবেশ। লেকে ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা। চুরি হয়েছে সড়ক বাতি। ভেঙে গেছে ওয়াকওয়ে। এ অবস্থার জন্য রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষককে (রাজউক) দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রকল্পটির দায়িত্ব রাজউকের কাছ থেকে সরিয়ে সিটি করপোরেশনকে দিতে বলছেন নগরবিদরা। তবে রাউজকের দাবি, তদারকির কাজ নিয়মিতই চলছে। রক্ষণাবেক্ষণের সাড়ে ৯ কোটি টাকার সাড়ে ৪ কোটিই দিচ্ছেন তারা। রাজধানীর হাতিরঝিল। বুকভরে একটু নিঃশ্বাস নিতে এখানে আসেন নগরবাসী। নাগরিক কোলাহল থেকে খোঁজেন খানিকটা স্বস্তি। তবে সম্প্রতি হারিয়েছে সেই জৌলুস। পরিণত হয়েছে যেন ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে। ল্যাম্পপোস্ট আছে, চুরি হয়ে গেছে সড়কবাতি। ভেঙে গেছে ওয়াকওয়ে। ফোয়ারাটি নষ্ট অনেক দিন। সন্ধ্যার পর বসে মাদকের আড্ডা। প্রায়ই ঘটছে ছিনতাই। লেকে মিলছে মরদেহও। হাতিরঝিলের এক পথচারী জানান, সকাল বেলা দেখা যায় বখাটেরা আড্ডা দেয়। অফিসে যাওয়ার সময় গাঁজার গন্ধে পেট ফুলে যায়। আরেক পথচারী জানান, এখানকার কিছু জায়গা নোংরা। সেখান থেকে অনেক দুর্গন্ধ আসে। আর এর কারণ হিসেবে রাজউককে দুষছেন নগরবিদরা। বলছেন, তাদের অক্ষমতার কারণেই এই অবস্থা। তাই এর দায়িত্ব দিতে বলছে সিটি করপোরেশনকে। নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব বলেন, সিটি করপোরেশনের দেখভাল করার সিস্টেমেটিক কাঠামো রয়েছে। এই কাঠামো রাজউকের নাই। যতই বাগড়াম্বর করুক এমন কাঠামো না থাকলে এই ধরনের প্রকল্পের দায়িত্বভার তার নেওয়া উচিত না। তবে রাজউকের দাবি, হাতিরঝিলের পরিবেশ ঠিক রাখতে নিয়মিত কাজ করছেন তারা। এরই মধ্যে সংরক্ষিত করা হয়েছে কিছু জায়গায়, দ্রুতই ঠিক হবে ওয়াকওয়ে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজউকের এক প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এখানে আদালতের একটা রায় আছে। সেটা মেনেই আমরা হাতিরঝিলে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখব। সিটি করপোরেশনের কাছে দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়টি আমাদের নীতিগত সিদ্ধান্ত। এ নিয়ে আমার মতামত দেওয়ার কিছু নেই। রাজউক বলছে, হাতিরঝিল রক্ষণাবেক্ষণে বছরে খরচ প্রায় সাড়ে ৯ কোটি টাকা। দোকানপাট, পরিবহন ও অন্যান্য খাত থেকে বছরে আসে পাঁচ কোটি আর বাকি সাড়ে চার কোটি দিচ্ছেন তারা।
ময়লার ভাগাড়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন যাত্রাবাড়ী-ডেমরার বাসিন্দারা: যাত্রাবাড়ী-ডেমরা এলাকার আশপাশে ময়লার ভাগাড়ের কারণে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এই এলাকায় সড়কের পাশে ময়লা ফেলার কারণে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে। একই সাথে, ময়লার কারণে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে এবং মশা-মাছির উপদ্রব বাড়ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে সড়কের পাশে ময়লা ফেলার কারণে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে এবং এই কারণে বিভিন্ন রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। গত ১০ মে ‘কোনাপাড়া-মাতুয়াইল পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন’ নামক সংগঠনের উদ্যোগে এ মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেয় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ আশপাশের আবাসিক এলাকার সাধারণ জনগণ। ভারী শিল্পের বিষাক্ত ধোঁয়া ও ময়লার ভাগাড় থেকে জীবন রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন করেছে রাজধানীর কোনাপাড়া, মাতুয়াইল, যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, মান্ডাসহ আশপাশের এলাকাবাসী। এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রতিদিন বিষাক্ত কালো ধোঁয়ার সঙ্গে সালফার-ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড, সিসাসহ অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদান নির্গত হচ্ছে মিলগুলো থেকে। এর সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। ক্ষতিকর উপাদানের কারণে এলাকার অনেকেই এরই মধ্যে ফুসফুস ও কিডনির বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হয়েছে বলেও অভিযোগ তাদের। এ সময়, আবাসিক এলাকায় অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা বেশ কয়েকটি স্টিল মিল ও মাতুয়াইল ময়লার ডিপো অপসারণের দাবিও জানান তারা।
প্রমত্তা নড়াই নদী এখন শুধুই ময়লার ভাগাড়: রাজধানীর রামপুরা সেতু ও বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবনের মাঝ দিয়ে পুব দিকে ত্রিমোহিনীর দিকে চলে গেছে প্রশস্ত একটি সড়ক। সড়কের বাঁ পাশের ফুটপাত দিয়ে হাঁটা দিলে আচমকা উৎকট দুর্গন্ধ এসে নাকের ভেতরে ঢুকে পড়ে। এখানে সিটি করপোরেশনের একটি ময়লা ভাগাড় রয়েছে। কোনোরকম নাক-মুখ চেপে সামনে এগোলে সবার আগে চোখে পড়বে একটি মরা নদী। হরেক গাছগাছালিতে ভরা নদীটির তীর কংক্রিকেটের বেড়া দিয়ে ঘেরা। নদী হলেও আসলে সেটিকে সরু খাল বা জলরেখা বলা চলে। সেই খালের তীরেই ছোট্ট একটি সাইনবোর্ডে লেখা ‘নড়াই নদী’। সাইনবোর্ড না দেখলে যে কেউ মরা খালই ভাববে নদীটিকে। নদীর তীর ধরেই এগিয়ে গেছে সড়কটি। নদীর একপাশে বনশ্রী এলাকা, অপরপাশে আফতাবনগর। ফুটপাত দিয়ে আরও কিছুদূর গেলে বনশ্রীর ‘সি’ ব্লকের মাথায় আরেকটি ময়লার উন্মুক্ত ভাগাড় দেখা যাবে। বাসাবাড়ি থেকে ময়লা এনে সিটি করপোরেশনের লোকজন এখানে ফেলছে। পরে ময়লার গাড়িতে করে তা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অন্যত্র। নদীতীর ধরে মাইলখানেক হাঁটার পর রামপুরা সেতু থেকে মেরাদিয়া বাজার পর্যন্ত সিটি করপোরেশনের এমন তিনটি ভাগাড় চোখে পড়েছে। কেবল তা-ই নয়, ময়লা-আবর্জনায় ঢাকা পড়েছে নদীতীরের পুরোটা। কোথাও কোথাও আবার আগুন দিয়ে পোড়ানো হচ্ছে সেই ময়লা। তবে মেরাদিয়া হাট এলাকায় নদীতীর দখল করে বিভিন্ন দোকানপাট গড়ে উঠেছে। সিটি করপোরেশনের আরও একটি ভাগাড় রয়েছে এখানে। নদীর তীরে খোলা জায়গায় ময়লা ফেলা হচ্ছে। এতে আশপাশের বাসিন্দাদের অসহনীয় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। নদীর বনশ্রী অংশে ময়লার ভাগাড় হলেও অপরপাশের আফতাবনগর অংশে তীর দখল করে গড়ে উঠেছে উঁচু উঁচু ভবন, অ্যাপার্টমেন্ট ও হাসপাতাল। কোনো কোনো ভবন নদীর ভেতরে ঢুকে গেছে। সড়ক সম্প্রসারণের নামেও নদীর জায়গা দখল করে ফুটপাত নির্মাণ করা হয়েছে। বনশ্রীর ‘সি’ ব্লকে কথা হচ্ছিল রুহুল নামের স্থানীয় এক বাসিন্দার সঙ্গে। তিনি বলেন, বনশ্রী ও আফতাবনগরের সব আবর্জনা এই নদীতে ফেলা হয়। উন্মুক্ত স্থানে ময়লার ভাগাড় করায় আশপাশের এলাকার বাসিন্দাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। ঠিকমতো প্রাণভরে শ্বাস নিতে পারি না দুর্গন্ধের কারণে।
কেরানীগঞ্জে সড়কের দু’পাশে ময়লার ভাগাড়, দুর্ভোগে স্থানীয়রা: রাজধানীর কেরানীগঞ্জে গুরুত্বপূর্ণ একটি সংযোগ সড়কের উভয়পাশ ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। তেঘরিয়া ইউনিয়নের করেরগাও এলাকার রতনের খামারমুখি প্রায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করা কেরানীগঞ্জের বাসিন্দারা নানারকম দুর্ভোগে পড়ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্যস্ততম এই সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন শত শত মানুষ ও যানবাহন কেরানীগঞ্জ থেকে ঢাকা-ভাঙা এক্সপ্রেসওয়ের দিকে যাতায়াত করে। অথচ সড়কের দুই পাশ বাসা-বাড়ি এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বর্জ্যে ভরা। আবর্জনার স্তূপে ঢাকা পড়ছে সড়কের উভয়পাশ। ১২ ফুট প্রশস্ত সড়কটি এখন মাত্র ৩ ফুট ব্যবহারযোগ্য আছে। তবে সড়কটির দু’পাশে দাঁড়িয়ে আছে বর্জ্যবাহী ট্রাক, পিকআপ-ভ্যান। ময়লা ফেলার এসব যানগুলো বিভিন্ন এলাকার গৃহস্থালি, দোকান ও শিল্পকারখানার মিশ্রিত বর্জ্যে ভরা। মফিজ মিয়া নামে এক ব্যক্তি বলেন, কেরানীগঞ্জের আগানগর এলাকার বাসা-বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করে ট্রাকে তুলি। ওইসব বর্জ্য এখানে ফেলি। প্রতিদিন এখানে অন্তত এক ট্রাক ময়লা ফেলে যাই। করেরগাঁও এলাকার বাসিন্দা আব্দুল হালিম (৫৩) বলেন, ৫-৬ বছর ধরে ময়লা ফেলার কারণে আমাদের এ গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি এখন ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স